রিয়ালের নাটকীয় জয়: সিটিকে কাঁদিয়ে হাসলো লস ব্লাঙ্কোস

রিয়ালের নাটকীয় জয়: সিটিকে কাঁদিয়ে হাসলো লস ব্লাঙ্কোস

রিয়ালের এখানে নাটক সব সময়ই নতুন মাত্রা যোগ করে। কখনো কখনো এমন কিছু মুহূর্ত আসে যা ইতিহাস হয়ে যায়, যা ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে আজীবন রয়ে যায়। তেমনই এক রাত কাটলো ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে, যেখানে ইতিহাদ স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এক মহাকাব্যিক ম্যাচ দেখলো বিশ্ব।

রেফারি শেষ হুইসাল বাজানোর সঙ্গে সঙ্গেই রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবলাররা আনন্দে লাফিয়ে উঠলো, উচ্ছ্বাসে ভাসলো সমর্থকেরা, আর পেপ গার্দিওলার চোখেমুখে ফুটে উঠলো চরম হতাশা। আর কতবার? কতবার এই স্প্যানিশ কোচকে রিয়ালের এমন হৃদয় বিদারক কামব্যাকের শিকার হতে হবে?

সিটি দুইবার এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ৩-২ গোলের ব্যবধানে হার মানলো রিয়ালের কাছে। আর তাতেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের আরও একটি মহান রাতের সাক্ষী হয়ে থাকলো ফুটবল বিশ্ব!

প্রথম থেকেই উত্তেজনা: বল দখলে সিটি, কিন্তু সুযোগ কাজে লাগালো রিয়াল

গোটা ম্যাচজুড়ে ম্যানচেস্টার সিটি আধিপত্য বিস্তার করেছে বলে মনে হবে পরিসংখ্যানে চোখ রাখলে। বল দখলের লড়াইয়ে স্পষ্টতই এগিয়ে ছিল ইংলিশ চ্যাম্পিয়নরা, কিন্তু সুযোগ সৃষ্টি এবং তা কাজে লাগানোর দিক থেকে রিয়াল ছিল অনন্য।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী:
🔹 সিটির বল দখল: ৬২%
🔹 রিয়ালের বল দখল: ৩৮%
🔹 রিয়ালের মোট শট: ২০ (অন-টার্গেট ৮)
🔹 সিটির মোট শট: ১১ (অন-টার্গেট ৪)

তবে শুধুমাত্র পরিসংখ্যান দিয়ে ফুটবলের সৌন্দর্য বোঝানো যায় না। ম্যাচের নাটকীয়তা, শেষ মুহূর্তের চমক, অনুপ্রেরণামূলক পারফরম্যান্স এবং মানসিক শক্তিই যে রিয়ালকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে, তা আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল।

প্রথমার্ধ: হলান্ডের গোলের পরও পিছিয়ে গেল সিটি

প্রথমার্ধে দুই দলই সমানভাবে লড়াই করে। ম্যাচের ১১ মিনিটেই রিয়ালের সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ আসে। কিন্তু এমবাপের শট অবিশ্বাস্যভাবে আটকে দেন এদেরসেন।

এক মিনিট পর আরও একবার সুযোগ তৈরি হয়, এবার বল পেয়ে যান ফারলান্দ মেন্দি। তিনি প্রায় ফাঁকা পোস্টে শট নিলেও তা ঠেকিয়ে দেন নাথান আকে।

এদিকে রিয়ালের একের পর এক সুযোগ হাতছাড়া হতে থাকলেও সিটি সুযোগ পেয়েই সেটিকে কাজে লাগায়। ১৯ মিনিটে আর্লিং হলান্ড গোল করেন। জ্যাক গ্রিলিশের ক্রস থেকে ভার্দিওল বুক দিয়ে টোকা দেন হলান্ডের উদ্দেশ্যে। সেখানে একটুও দেরি না করে হলান্ড বল ঠেলে দেন রিয়ালের জালে—সিটি এগিয়ে যায় ১-০ ব্যবধানে!

এরপর প্রথমার্ধের বাকি সময়টা দুই দলের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে কেটেছে। কিন্তু রিয়াল কখনই হাল ছাড়েনি, কারণ তারা জানতো—নাটকের আসল অংশ এখনো বাকি!

দ্বিতীয়ার্ধ: কামব্যাকের শুরু, এমবাপের গোল

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আবারও আক্রমণ শুরু করে সিটি। হলান্ডের একটি শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে, যা রিয়ালকে রক্ষা করে।

তবে ৬০ মিনিটে আর ফরাসি সুপারস্টার কিলিয়ান এমবাপেকে আটকানো যায়নি!

গোলের সূত্রপাত হয় দানি সেবায়োসের ফাউল থেকে। রিয়াল মিডফিল্ডারকে ডি-বক্সের বাইরে ফাউল করেন বের্নান্দো সিলভা। সেখানে থেকে ফেদরিকো ভালভার্দে ফ্রি-কিক নেন, যা সিটির ডিফেন্সে আটকে যায়।

তবে ফিরতি বলে সেবায়োস সেটি এমবাপেকে বাড়িয়ে দেন। এমবাপে লাফিয়ে উঠে বাঁ পায়ে শট নেন। শটটি দুর্বল হলেও তা গোলকিপার এদেরসেনকে ফাঁকি দিয়ে জালে জড়ায়—রিয়াল সমতায় ফেরে ১-১!

৭৭ মিনিট: হলান্ডের দ্বিতীয় গোল, কিন্তু…

৬৫ মিনিটে সহজ একটি সুযোগ মিস করেন জুড বেলিংহাম। তবে ৭৭ মিনিটে আবারও এগিয়ে যায় সিটি!

পেনাল্টি পায় সিটি, যেখানে বড় দায় ছিল রিয়ালের সেবায়োসের। বক্সের মধ্যে বল নিয়ন্ত্রণ নিতে গিয়ে তিনি ফিল ফোডেনকে ফাউল করেন। ফলে রেফারি সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান।

স্পট কিক থেকে গোল করে সিটিকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন হলান্ড। মনে হচ্ছিলো, এবার হয়তো সিটির জয় নিশ্চিত! কিন্তু কে জানতো, আসল নাটক তখনো বাকি!

শেষ মুহূর্তের জাদু: ব্রাহিম দিয়া ও বেলিংহামের অবিশ্বাস্য গোল

৮৬ মিনিটে রিয়াল আবারও সমতায় ফেরে। বদলি হিসেবে নামা ব্রাহিম দিয়াম চমৎকার এক গোল করে ম্যাচ ২-২ করেন। লুকা মদ্রিচের বাড়ানো বল ধরে জোরালো শটে গোল করেন তিনি, এদেরসেন কোনোভাবেই সেটি ঠেকাতে পারেননি।

কিন্তু নাটকের আসল মুহূর্ত আসে ইনজুরি টাইমে! ৯০+৩ মিনিটে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের দুর্দান্ত এক দৌড় পুরো সিটির ডিফেন্সকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। রুবেন দিয়াজ তার গতির সঙ্গে তাল মিলাতে পারেননি, ফলে ভিনিসিয়ুস সুযোগ বুঝে বল তুলে দেন বেলিংহামের উদ্দেশ্যে।বেলিংহাম ঠান্ডা মাথায় ফাঁকা পোস্টে বল পাঠিয়ে রিয়ালকে জয় এনে দেন—একটি সত্যিকারের “চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ক্লাসিক” মুহূর্ত!

রিয়ালের ‘চ্যাম্পিয়নস লিগ ডিএনএ’ কেনো অনন্য?

রিয়াল মাদ্রিদ মানেই এক অনন্য ইতিহাস। এরা ম্যাচের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিশ্বাস করে তারা জিততে পারে, এবং বেশিরভাগ সময় সেটি বাস্তবে রূপ নেয়। এই দলের মানসিকতা, দক্ষতা, ফিনিশিং এবং অভিজ্ঞতা তাদেরকে অন্যান্য দলের চেয়ে আলাদা করে রেখেছে। যখনই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের লড়াই হয়, তখন মনে রাখতে হবে—“এখনো রিয়াল আউট হয়নি!” গার্দিওলার সিটি হয়তো বিশ্বের অন্যতম সেরা দল, কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়ালের বিপক্ষে তাদের শাপমুক্তি কবে হবে, সেটিই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন!

JitaBet ,  JitaWin , এবং  JITA88 এ আপনার বাজি রাখুন  , তারা সত্যিই ভাল প্রতিকূলতা অফার করে, খেলুন এবং বড় জিতুন!

উপসংহার

এই ম্যাচ আবারও প্রমাণ করলো কেনো রিয়াল মাদ্রিদ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বকালের সেরা দল! যখনই মনে হয় তারা ব্যাকফুটে, তখনই তারা নতুন করে ঘুরে দাঁড়ায় এবং অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচ বের করে নিয়ে আসে। ম্যানচেস্টার সিটি হয়তো আধুনিক ফুটবলের অন্যতম সেরা দল, কিন্তু রিয়ালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার অভিজ্ঞতা, ঐতিহ্য ও মানসিকতা তাদের প্রতিবার নতুন করে শিখিয়ে দেয়—“ফুটবল ৯০ মিনিটের খেলা, কিন্তু রিয়ালের জন্য তা শেষ হয় না যতক্ষণ না শেষ বাঁশি বাজে!” এই ম্যাচে শুধু তিন পয়েন্ট বা পরবর্তী রাউন্ডের টিকিট জেতা হয়নি, বরং ফুটবলপ্রেমীরা পেয়েছে এক অসাধারণ নাটকীয়তা, রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা, এবং ইতিহাসের পাতায় যুক্ত হওয়া আরও একটি মহাকাব্যিক ম্যাচ! গার্দিওলার দল হয়তো কৌশলে এগিয়ে ছিল, কিন্তু ফুটবল শুধুই পরিসংখ্যানের খেলা নয়, এটি মানসিক শক্তি ও লড়াইয়ের খেলা! আর সেই লড়াইয়ে রিয়াল বারবার দেখিয়েছে তারা কখনোই হাল ছাড়ে না!

For More Update Follow JitaSports English News and JitaSports BD News