ব্রাজিল বিশ্বকাপ দল ২০২৫ নিয়ে বিশদ বিশ্লেষণ, নেইমার বাদ, আনচেলত্তির নতুন কৌশলে দল গঠনের সম্পূর্ণ গল্প জানুন। বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে ব্রাজিল এক অমর নাম। পাঁচবারের বিশ্বকাপজয়ী দলটির প্রতিটি স্কোয়াড নির্বাচনই বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। তবে ২০২৫ সালের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের জন্য নতুন কোচ কার্লো আনচেলত্তি যখন তার প্রথম ব্রাজিল দল ঘোষণা করেন, তখন যেন পুরো ফুটবলবিশ্ব থমকে যায়। কারণ, দলে নেই দেশের পোস্টার বয়, নেইমার দা সিলভা!
নেইমারকে বাদ দেওয়ার পেছনের কারণ
নেইমার বর্তমানে সান্তোসে ফিরেছেন এবং চোট কাটিয়ে কয়েকটি ম্যাচও খেলেছেন। তবে কোচ আনচেলত্তির ভাষায়, “আমি ভালো ফর্মে থাকা খেলোয়াড়দেরই দলে রেখেছি।” তার মানে, শুধু নাম বা খ্যাতি নয়, মাঠের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সই মূল বিবেচ্য।
আসলে ২০২৩ সালের অক্টোবরে জাতীয় দলের হয়ে খেলতে গিয়ে ACL এবং মেনিসকাস ছিঁড়ে যাওয়ার পর থেকেই নেইমার মাঠের বাইরে ছিলেন। এখন তিনি ধীরে ধীরে ফিরছেন, তবে আন্তর্জাতিক ফুটবলের উচ্চ চাপে খেলানোর জন্য হয়তো তিনি পুরোপুরি প্রস্তুত নন।
আনচেলত্তির কৌশলগত রূপান্তর: নতুন ব্রাজিল গঠনের মিশন
যদি কেউ ভেবে থাকেন ব্রাজিল জাতীয় দল মানেই শুধু সৌন্দর্য্যপূর্ণ ফুটবল, তবে আনচেলত্তি হয়তো সেই ছবিটা একটু বদলাতে যাচ্ছেন। তার ফুটবল দর্শন তুলনামূলকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ—আক্রমণাত্মক হলেও সংরক্ষণশীল, রোমাঞ্চকর হলেও রক্ষণশীলতার মিশেলে।
রিয়াল মাদ্রিদে তার চার বছরের দ্বিতীয় মেয়াদে দেখা গেছে কৌশলগত নমনীয়তা। কখনও ৪-৩-৩, আবার কখনও ৪-৪-২, এমনকি ৪-২-৩-১ ফর্মেশনের মাধ্যমে খেলেছেন। এই কৌশলগত পরিবর্তনের সুবিধা তিনি ব্রাজিল দলে প্রয়োগ করছেন বলেই প্রতীয়মান।
বিশেষত, ব্রাজিল দলে এত তারকা খেলোয়াড় থাকা সত্ত্বেও মাঠে ভারসাম্য রক্ষা করা সবসময় সহজ নয়। তাই কাসেমিরোর মতো খেলোয়াড়কে দলে রেখে তিনি মাঝমাঠে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে চান। শুধু প্রতিভা নয়, অভিজ্ঞতাকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি।
তারুণ্য বনাম অভিজ্ঞতা: স্কোয়াড গঠনের ব্যালান্স
ব্রাজিলের বর্তমান স্কোয়াডে যেমন আছেন অভিজ্ঞ কাসেমিরো, আলিসন ও মারকুইনিয়োস, তেমনই আছেন তরুণ মুখ এস্তেভাও, আন্দ্রে সান্তোস, ও বেরালদো। এই ভারসাম্য আনচেলত্তির মস্তিষ্কপ্রসূত এক দূরদর্শী কৌশল।
তরুণ খেলোয়াড়দের মাঠে সুযোগ দিলে তারা যেমন অভিজ্ঞতা অর্জন করে, তেমনি অভিজ্ঞদের সঙ্গে খেললে মানসিক দৃঢ়তাও বাড়ে। ফলে বিশ্বকাপের মতো হাই-প্রেশার ম্যাচে মানিয়ে নেওয়া তুলনামূলক সহজ হয়ে ওঠে।
আর তারুণ্য মানেই শুধু বয়স নয়—এরা মাঠে এনে দেয় গতি, তেজ, এবং অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত। ঠিক যেমন ভিনিসিউস বা মার্টিনেলি হঠাৎ করেই পুরো ম্যাচের গতিপথ বদলে দিতে পারে।
ব্রাজিল বিশ্বকাপ দল ২০২৫ নেইমার না থাকা: অপশন না সমস্যার সৃষ্টি?
অনেকের দৃষ্টিতে নেইমারকে ছাড়া ব্রাজিল দল ভাবাই যায় না। তবে আনচেলত্তির সিদ্ধান্ত এই ধারণায় পরিবর্তন আনতে পারে। যদিও তিনি নিজেই জানিয়েছেন, “নেইমার সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন,” তবুও বর্তমান বাস্তবতায় তিনি তাকে দলে রাখেননি।
এই সুযোগটাই অন্য ফরোয়ার্ডদের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে। এস্তেভাও, রাফিনহা, মার্টিনেলি, কুনহা—এরা এখন সুযোগ পাবে নিজেকে প্রমাণ করার। আর যদি তারা ভালো করে, তবে নেইমার দলে ফিরে এলেও তাকে প্রথম একাদশে জায়গা পাওয়া কঠিন হতে পারে।
তবে নেইমার নিজে যখন শতভাগ ফিট হয়ে ফিরবেন, তখন তার অভিজ্ঞতা ও স্কিল নিশ্চয়ই দলে ভিন্নমাত্রা যোগ করবে।
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ: কী বলছে পরিসংখ্যান?
ব্রাজিল গত ১৪ ম্যাচে ৫টি হেরেছে, যা এই ঐতিহ্যবাহী দলের জন্য অস্বাভাবিক। গোল খেয়েছে ১৬টি। এই পরিস্থিতি পাল্টানোর দায়িত্ব এখন আনচেলত্তির কাঁধে।
এক নজরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- সর্বশেষ জয়: পেরুর বিপক্ষে ২-০
- সর্বশেষ হার: আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ১-৪
- সর্বোচ্চ গোলদাতা: রিচার্লিসন (৩ গোল)
- সর্বোচ্চ অ্যাসিস্ট: রাফিনহা (৪টি)
এই তথ্যগুলোই দেখিয়ে দেয় যে, ফরোয়ার্ডদের দায়িত্ব আরও বাড়াতে হবে এবং রক্ষণভাগে আনতে হবে শৃঙ্খলা।
বিশ্বকাপ ২০২৬: ব্রাজিলের চূড়ান্ত লক্ষ্য
এই বাছাইপর্ব হচ্ছে সেই মঞ্চ, যেখান থেকে শুরু হবে চূড়ান্ত বিশ্বকাপ অভিযানের প্রস্তুতি। ব্রাজিলের মতো দলের জন্য শুধু যোগ্যতা অর্জন করাই নয়, তা করতে হবে রাজকীয়ভাবে। কারণ তাদের লক্ষ্য শুধুই অংশগ্রহণ নয়—ট্রফি জয়।
আনচেলত্তির মতে, “আমাদের একটি উদ্দেশ্য—ব্রাজিলকে আবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করা। আমি জানি এটা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়।”
তবে বিশ্বকাপ জিততে হলে শুধু প্রতিভা নয়, দরকার দলগত সংহতি, কৌশলগত গভীরতা এবং মানসিক দৃঢ়তা। আনচেলত্তি এই তিনটির সমন্বয় ঘটাতে সক্ষম বলেই আশা করা যায়।
বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া: মিডিয়া ও ভক্তদের অভিমত
নেইমারকে বাদ দেওয়া নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় উত্তাল হয়ে ওঠে ফুটবলবিশ্ব। অনেকে আনচেলত্তির সাহসিকতার প্রশংসা করেছেন, আবার কেউ কেউ একে ‘বড় ভুল’ বলেও মন্তব্য করেছেন।
বিশ্ব মিডিয়া কী বলেছে:
- ESPN: “Ancelotti is building for the future, not just for the fame.”
- BBC Sport: “Brazil’s new era begins without Neymar – a brave but calculated decision.”
- Marca (Spain): “Vinicius now holds the key to Brazil’s attacking future.”
এইসব মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, আনচেলত্তির ব্রাজিল একটি নতুন পরিচয়ে বিশ্ব ফুটবলে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে।
আনচেলত্তি: বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্যেই ব্রাজিলের হাল ধরেছেন
৬৫ বছর বয়সী আনচেলত্তি এক বিশাল অভিজ্ঞ কোচ। রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হিসেবে তার সাফল্য কিংবদন্তির মতো। চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা, লা লিগা শিরোপা, এমনকি ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মান লিগেও শিরোপা জেতা কোচ তিনি। এখন তার লক্ষ্য একটাই—ব্রাজিলকে আবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করা।
“আমি গর্বিত, সম্মানিত। ব্রাজিল বিশ্বের সেরা দল, এবং আমরা ২০২৬ সালে আবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে চাই,”– বলেন আনচেলত্তি।
কাসেমিরো, রিচার্লিসন এবং আন্তোনির প্রত্যাবর্তন
নেইমার বাদ পড়লেও ব্রাজিল দলে ফিরেছেন কিছু পুরোনো মুখ। কাসেমিরো, যিনি আগে আনচেলত্তির অধীনে রিয়ালে খেলেছেন, সেই অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার দলে আছেন। কোচ বলেন, “ব্রাজিলের দরকার এমন খেলোয়াড় যাদের মধ্যে আছে নেতৃত্ব, আত্মত্যাগ আর প্রতিভা।”
রিচার্লিসনও জাতীয় দলে ফিরেছেন, যদিও ক্লাবে ফর্ম নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন আছে। আন্তোনি, যিনি বর্তমানে রিয়াল বেটিসে ধারে খেলছেন, তিনিও স্কোয়াডে জায়গা করে নিয়েছেন।
ভিনিসিউস জুনিয়রের ওপর ভরসা
যদিও জাতীয় দলে ভিনিসিউস এখনও সেই পুরনো ছন্দে আসেননি, তবে ক্লাবে তার পারফরম্যান্স অসাধারণ। ব্যালন ডি’অর রানার-আপ হওয়া ভিনি সম্পর্কে আনচেলত্তির মন্তব্য: “ভিনিসিউস এখনও সেরা রূপ দেখাতে পারেনি। তবে সে লড়াকু, প্রতিশ্রুতিশীল। আমি নিশ্চিত, সে সময়ের সাথে নিজেকে প্রমাণ করবে।”
দলের পূর্ণ স্কোয়াড: তারুণ্যের জয়গান
ব্রাজিলের ২৫ সদস্যের এই স্কোয়াডে একাধিক নতুন মুখও রয়েছে। তরুণ প্রতিভা এস্তেভাও, যিনি পালমেইরাসের হয়ে দুর্দান্ত খেলছেন, তিনিও জায়গা পেয়েছেন।
দলের তালিকা
গোলরক্ষক: আলিসন (লিভারপুল), বেন্টো (আল নাসর), হুগো সুজা (করিন্থিয়ান্স)
ডিফেন্ডার: মারকুইনিয়োস, বেরালদো (পিএসজি), অ্যালেক্স সান্দ্রো, দানিলো, ওয়েসলি, লেও অরটিজ (ফ্লামেঙ্গো), ভান্ডারসন (মোনাকো), কার্লোস অগুস্তো (ইন্টার মিলান), অ্যালেক্সসান্দ্রো রিবেইরো (লিল)
মিডফিল্ডার: কাসেমিরো (ম্যান ইউনাইটেড), ব্রুনো গিমারায়েস (নিউক্যাসল), এডারসন (আতালান্তা), আন্দ্রেয়াস পেরেইরা (ফুলহাম), আন্দ্রে সান্তোস (স্ট্রাসবুর্গ), গার্সন (ফ্লামেঙ্গো)
ফরোয়ার্ড: রাফিনহা (বার্সেলোনা), রিচার্লিসন (টটেনহাম), আন্তোনি (রিয়াল বেটিস), গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেলি (আর্সেনাল), মাথেয়ুস কুনহা (উলভারহ্যাম্পটন), ভিনিসিউস জুনিয়র (রিয়াল মাদ্রিদ), এস্তেভাও (পালমেইরাস)
পরবর্তী ম্যাচ সূচি
- ৫ জুন: ইকুয়েডরের বিপক্ষে (অ্যাওয়ে ম্যাচ)
- ১০ জুন: প্যারাগুয়ের বিপক্ষে (হোম ম্যাচ, সাও পাওলো)
এই দুটি ম্যাচ ব্রাজিলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ আমেরিকান গ্রুপে এখন তারা চতুর্থ স্থানে, যেখানে শীর্ষ ছয় দল সরাসরি বিশ্বকাপে যাবে।
ব্রাজিল দল ২০২৫ – ভবিষ্যতের দিশা
নতুন কোচ, নতুন কৌশল, পুরাতন কিছু খেলোয়াড়ের প্রত্যাবর্তন এবং তরুণ প্রতিভার সমন্বয়ে গঠিত এই দল অনেক আশা জাগায়। নেইমার এখনো ব্রাজিলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় তারকা হলেও, আনচেলত্তি বুঝিয়ে দিয়েছেন যে সময় এসেছে ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর।
ভবিষ্যতে নেইমার দলে ফিরবেন কি না, সেটা সময়ই বলবে। কিন্তু আপাতত, আনচেলত্তির ব্রাজিল বিশ্বকাপ দল ২০২৫ তারুণ্যের উপর ভর করে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে।
JitaBet , এবং JitaWin এ আপনার বাজি রাখুন , তারা সত্যিই ভাল প্রতিকূলতা অফার করে, খেলুন এবং বড় জিতুন!
FAQs
নেইমার কি সম্পূর্ণ সুস্থ?
তিনি চোট থেকে ফিরে সান্তোসের হয়ে কিছু ম্যাচ খেলেছেন, তবে এখনও শতভাগ ফিট নন।
কেন কাসেমিরোকে দলে রাখা হয়েছে?
তার অভিজ্ঞতা, নেতৃত্বগুণ এবং আনচেলত্তির সঙ্গে পূর্ব সম্পর্কই মূল কারণ।
ভিনিসিউস কি প্রথম একাদশে খেলবেন?
সম্ভবত হ্যাঁ, কারণ আনচেলত্তি তার উপর সম্পূর্ণ আস্থা রেখেছেন।
আন্তোনি কি মূল দলে সুযোগ পাবেন?
রাফিনহা ও ভিনিসিউসের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে, তবে তার সাম্প্রতিক ফর্ম ভালো।
রিচার্লিসন কি জাতীয় দলে ভালো করবেন?
তাকে দলে রাখা হয়েছে আত্মত্যাগ ও দলের প্রতি দায়িত্ববোধের কারণে। কোচ তার উপর আস্থা রেখেছেন।
এস্তেভাও কে?
একজন তরুণ এবং প্রতিভাবান ফরোয়ার্ড, যিনি পালমেইরাসের হয়ে চমৎকার ফর্মে রয়েছেন।
উপসংহার:
নতুন কোচ, নতুন চিন্তা, নতুন পথচলা—সব মিলিয়ে ব্রাজিল দল ২০২৫ শুধুমাত্র একটি স্কোয়াড নয়, বরং এটি একটি রূপান্তরের নাম। নেইমার নেই, কিন্তু তার অভাব পূরণে প্রস্তুত একঝাঁক তরুণ তারকা।
ফুটবল বিশ্ব অপেক্ষা করছে, কখন দেখা যাবে সেই অনবদ্য ব্রাজিল—যারা শুধু খেলে না, খেলাকে এক শিল্পে পরিণত করে। ব্রাজিল দল ২০২৫ নিশ্চিতভাবেই পুরনো ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধারে এক নতুন অভিযানে নেমেছে। আনচেলত্তির প্রথম স্কোয়াডেই এর ইঙ্গিত স্পষ্ট। নেইমারের অনুপস্থিতি যতই হৃদয়বিদারক হোক না কেন, দলটির সম্ভাবনা উজ্জ্বল। আর ফুটবলপ্রেমীদের জন্য অপেক্ষা শুধুই মাঠে সেই ঝলক দেখার।
For More Update Follow JitaSports English News and JitaSports BD News