FIFA ২০২৬ সালের মেন’স বিশ্বকাপ হবে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও সবচেয়ে মনোযোগ আকর্ষণকারী ক্রীড়া অনুষ্ঠান। আমেরিকা, কানাডা এবং মেক্সিকো একযোগে এই প্রতিযোগিতার হোস্ট হিসাবে ভূমিকা পালন করবে। ইতিমধ্যেই আগামী দুই মাসে আমেরিকায় শুরু হতে যাচ্ছে FIFA ক্লাব বিশ্বকাপ, যা ২০২৬ বিশ্বকাপের প্রস্তুতির পরীক্ষার মঞ্চ হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু এই সময়ে ফুটবল বিশ্ব ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বিগ্ন যে FIFA এখনও শিশুদের সুরক্ষার ব্যাপারে স্পষ্ট ও কার্যকর কোনো নীতিমালা গ্রহণ করেনি।
বিশাল আকারের এই ধরনের ক্রীড়া ইভেন্টগুলো শিশুদের জন্য বিভিন্ন ঝুঁকি তৈরি করে, যেমন পাচার, যৌন শোষণ, শিশু শ্রম, আশ্রয়হীনতা, এবং পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতা। FIFA-এর অনুপস্থিতির কারণে এই শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে বড় ধরনের ফাঁকফোকর দেখা দিয়েছে।
প্রতিশ্রুতির পরেও বাস্তবায়নের অনুপস্থিতি
২০১৮ সালে যখন ২০২৬ বিশ্বকাপের হোস্ট হিসেবে আমেরিকা, কানাডা এবং মেক্সিকোকে বেছে নেয়, তখন মানুষের অধিকার এবং শিশু সুরক্ষা সংক্রান্ত একটি কৌশল গ্রহণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। এই কৌশলের আওতায় হোস্ট দেশগুলোকে শিশু সুরক্ষা প্রোটোকল তৈরি ও বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছিল।
কিন্তু সাত বছর পরেও দেখা যাচ্ছে, FIFA তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার ও শিশু অধিকার সংস্থা বলছে, শিশুদের সুরক্ষা এখনো FIFA-এর অগ্রাধিকার তালিকায় নেই, যা বিশাল উদ্বেগের বিষয়।
FIFA শিশুদের সম্মুখীন ঝুঁকিসমূহ
বৃহৎ ক্রীড়া আসরগুলোতে শিশুরা বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হয়, যেমন:
- শিশু পাচার: পর্যটক ও দর্শনার্থীর ভিড়ে অপরাধীরা শিশুদের অপহরণ ও পাচারে লিপ্ত হতে পারে।
- যৌন শোষণ ও নির্যাতন: বিশেষ করে বড়ো ইভেন্টে অপ্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি অপরাধীদের আগ্রাসন বেড়ে যায়।
- শিশু শ্রম: কিছু ক্ষেত্রে শিশুদের শ্রম ব্যবহারের অভিযোগ উঠে, যা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
- পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা: ভিড় ও গুজবের কারণে অনেক শিশু পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যার ফলে তারা বিপদে পড়ে।
এই ঝুঁকিগুলো মোকাবিলা করতে ক্রীড়া আয়োজকদের স্পষ্ট ও কার্যকর সুরক্ষা নীতিমালা থাকা আবশ্যক।
“Keeping the Game Safe” রিপোর্টের মূল সুপারিশসমূহ
University of Miami School of Law Human Rights Clinic এবং Centre for Sport and Human Rights দ্বারা প্রকাশিত “Keeping the Game Safe” রিপোর্টে এসব ঝুঁকি বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং FIFA ও হোস্ট শহরগুলোর জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে:
- বাধ্যতামূলক শিশু সুরক্ষা প্রশিক্ষণ: প্রতিটি আয়োজক, স্টাফ ও স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষিত করা।
- কঠোর ও বাধ্যতামূলক শিশু সুরক্ষা মানদণ্ড: সার্বিক নীতি ও আচরণবিধি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
- বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষিত সুরক্ষা কর্মকর্তা নিয়োগ: প্রত্যেক ভেন্যু ও হোস্ট শহরে শিশু সুরক্ষা কর্মকর্তা থাকা আবশ্যক।
- কেন্দ্রীভূত ও স্বচ্ছ রিপোর্টিং ব্যবস্থা: যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা দ্রুত শনাক্ত ও সমাধান করা যায়।
- ভেন্যুর শিশু-কেন্দ্রিক নকশা: যাতে শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত হয়।
- স্থানীয় ও জাতীয় বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞদের অংশগ্রহণ: নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্ত শিশু ও বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ।
FIFA ও হোস্ট দেশগুলোর করণীয়
উচিত একটি সম্মিলিত ও একক শিশু সুরক্ষা নীতি তৈরি করা যা আমেরিকা, কানাডা ও মেক্সিকোর সমস্ত হোস্ট শহরে কার্যকর হবে। সেই নীতিতে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও আইনি বাস্তবতা প্রতিফলিত হবে। বিশেষ করে শিশুদের ঝুঁকি বিবেচনা করে নিয়মাবলী প্রণয়ন করা জরুরি।
তাদের উচিত ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, মানসিক সাপোর্ট ও সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রমে তৎপর হওয়া।
২০২৬ বিশ্বকাপের জন্য শিশু অধিকার রক্ষার উচ্চ মান নির্ধারণ
বিশ্বকাপের আয়োজকরা কেবল ফুটবল উৎসব সফল করতে নয়, বরং মানবাধিকার রক্ষায় এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করাই হবে মূল উদ্দেশ্য, যাতে এই বৃহৎ আয়োজনে কোনো শিশু ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে।
FIFA ও হোস্ট দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করে এই নীতিমালা বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন করতে হবে।
শিশুদের প্রতি FIFA-এর দায়িত্ব ও আন্তর্জাতিক প্রত্যাশা
বিশ্ব ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে এর দায়িত্ব শিশুরা যেনো কোনো প্রকার নির্যাতন, শোষণ ও ঝুঁকির সম্মুখীন না হয় তা নিশ্চিত করা। আন্তর্জাতিক মহল এ বিষয়ে উচ্চ মানদণ্ড ও দৃঢ় পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছে।
বর্তমানে শিশু সুরক্ষায় FIFA-এর অনুপস্থিতি বিশ্বক্রীড়া মহলে নিন্দার কারণ হচ্ছে। ২০২৬ বিশ্বকাপের প্রেক্ষাপটে এটি যেনো আর পুনরাবৃত্তি না হয়, সেটাই চ্যালেঞ্জ।
উপসংহার
২০২৬ সালের বিশ্বকাপ হবে ক্রীড়া ইতিহাসের এক মহাকাব্য, যেখানে বিশ্বের কোটি কোটি দর্শক অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু এই ক্রীড়া উৎসবের পেছনে লুকানো শিশুরা যেনো ঝুঁকির সম্মুখীন না হয়, সেটি নিশ্চিত করাই হবে প্রধান দায়িত্ব।
FIFA ও হোস্ট দেশগুলোর উচিত অবিলম্বে শিশু সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তৎপর হওয়া। সামাজিক ও আইনি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে, যাতে শিশুদের অধিকার ও নিরাপত্তা সর্বোচ্চ স্তরে রক্ষা পায়।
শিশু অধিকারকে সম্মান জানিয়ে, নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলা ছাড়া ২০২৬ বিশ্বকাপের সাফল্য অসম্পূর্ণ থাকবে। বিশ্ব ফুটবল সমাজের প্রত্যাশা এই যে, এই বড় আয়োজনটি শুধু খেলার মঞ্চ নয়, বরং মানবিক মূল্যবোধ ও শিশু সুরক্ষার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠুক।
JitaBet , এবং JitaWin এ আপনার বাজি রাখুন , তারা সত্যিই ভাল প্রতিকূলতা অফার করে, খেলুন এবং বড় জিতুন!
FAQs
কেন FIFA ২০২৬ বিশ্বকাপের জন্য শিশু সুরক্ষা নীতি জরুরি?
কারণ বড় ক্রীড়া ইভেন্টগুলোতে শিশু পাচার, শ্রম, শোষণ ইত্যাদি ঝুঁকি থাকে।
FIFA কি এখনও ২০২৬ বিশ্বকাপের জন্য শিশু সুরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেছে?
না, এখনো FIFA এর তরফে সম্পূর্ণ ও স্পষ্ট নীতি প্রকাশিত হয়নি।
শিশু সুরক্ষার জন্য প্রধান সুপারিশগুলো কী কী?
প্রশিক্ষণ, সুরক্ষা কর্মকর্তার নিয়োগ, রিপোর্টিং ব্যবস্থা, এবং শিশু-কেন্দ্রিক ভেন্যু ডিজাইন।
FIFA ২০২৬ বিশ্বকাপ কোথায় অনুষ্ঠিত হবে?
আমেরিকা, কানাডা ও মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত হবে।
FIFA কীভাবে শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে?
একটি সমন্বিত নীতি প্রণয়ন, স্থানীয় বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করে।
For More Update Follow JitaSports English News and JitaSports BD News