শিরোনাম

লিওনেল মেসি: কিংবদন্তির শেষ অধ্যায় নাকি নতুন এক উত্থান?

লিওনেল মেসি: কিংবদন্তির শেষ অধ্যায় নাকি নতুন এক উত্থান?

লিওনেল মেসি বর্তমান ফুটবল দুনিয়ায় একজন খেলোয়াড়ের নাম শুনলেই কোটি কোটি ভক্তের মনে জ্বলে ওঠে একটাই ছবি—লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। প্রায় দুই দশক ধরে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রণে থাকা এই ক্ষুদে জাদুকর এখন জীবনের শেষ পর্যায়ে পা রেখেছেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই বয়সেও তিনি মাঠে নিজের উপস্থিতি দিয়ে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করছেন এবং বিশ্ববাসীকে বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন—’বয়স শুধু একটা সংখ্যা’।

২০২৫ সালের ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ ছিল মেসির জন্য একটি বাস্তবিক পরীক্ষার মঞ্চ। মেজর লিগ সকারের তুলনায় এখানে প্রতিপক্ষ ছিল অনেক বেশি শক্তিশালী ও অভিজ্ঞ। এই টুর্নামেন্টে পিএসজি, এফসি পোর্তো, এবং পালমেইরাসের মতো ক্লাবগুলোর বিপক্ষে খেলে মেসি দেখিয়েছেন, উচ্চ পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় তিনি কতটা প্রস্তুত।

ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপে মেসির পারফরম্যান্স: উচ্চ মানের প্রতিপক্ষের বিপক্ষে তার মূল্যায়ন

ইন্টার মায়ামির হয়ে মেসি যখন ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপে মাঠে নামেন, তখন সবাই অপেক্ষা করছিলেন—এই ৩৮ বছর বয়সী ফুটবলারের সাড়া জাগানো মুহূর্তগুলোর জন্য। মেসি তাদের নিরাশ করেননি। যদিও তার দল শেষ পর্যন্ত প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়ে, তবুও ব্যক্তিগতভাবে তার পারফরম্যান্স প্রশংসার দাবিদার।

গোল ও অ্যাসিস্ট:

  • পোর্তোর বিপক্ষে: ম্যাচ চলাকালে ইনজুরিতে ভুগলেও একটি দুর্দান্ত ফ্রি-কিকের মাধ্যমে জয়সূচক গোল করেন।
  • পিএসজির বিপক্ষে: দ্বিতীয়ার্ধে বেশ কয়েকটি ডিফেন্স-চেরা পাস ও ড্রিবল করে সুযোগ তৈরি করলেও সহ খেলোয়াড়রা তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন।

এই ম্যাচগুলো প্রমাণ করে, মেসি এখন আর শুধুমাত্র স্কোরার নন—তিনি এখন একজন খেলার পরিচালক, একজন নির্মাতা।

লিওনেল মেসি খেলার ধরনে পরিবর্তন: বয়স বাড়লেও দক্ষতা অটুট

মেসির ক্যারিয়ারের শুরুতে আমরা যেভাবে তাকে চিনতাম—দ্রুতগতির ড্রিবলার, বাম পাশ দিয়ে কেটে আসা উইঙ্গার, নির্ভরযোগ্য গোল স্কোরার—তা এখন আর নেই। কিন্তু তার জায়গায় এসেছে এক নতুন মেসি, যিনি সময় বুঝে পাস দেন, ফ্রি-কিক থেকে গোল করেন, এবং খেলার ছন্দ নিয়ন্ত্রণ করেন।

পরিসংখ্যানের আলোকে:

সূচকক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ ২০২৫মেজর লিগ সকার (২০২৫)ইউরোপ (বার্সা/পিএসজি)
গড় প্রতি ক্যারি দূরত্ব৫.৫ মিটার৬.১ মিটার৫.২–৫.৭ মিটার
প্রতি ৯০ মিনিটে ড্রিবল৪.৫৭.৯৯৯.১ (২০১১-১২)
অ্যাটাকিং থার্ডে পাস১৩.০২৪.৩৩৫.৬ (২০১১-১২)

এই ডেটাগুলো থেকে বোঝা যায়, মেসি এখন অনেক বেশি নির্বাচনমূলক পদ্ধতিতে খেলেন—যেখানে তার প্রতিটি মুভমেন্ট, পাস, ও শট একটি পরিকল্পনার অংশ।

ইন্টার মায়ামিতে মেসির ভূমিকা: ফিজিক্যাল চাপ কমিয়ে প্রভাব বজায় রাখা

ইন্টার মায়ামিতে মেসির জন্য আলাদা রোটেশন কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। হেড কোচ হাভিয়ের মাশচেরানো নিয়মিত তার সময় ও মিনিট নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। কম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তাকে বিশ্রাম দেওয়া হয়, এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মাঠে নামিয়ে তার সেরা ফর্মটুকু টেনে আনা হয়।

মেসি জানেন—তাকে এখন আগের মতো পুরো ৯০ মিনিট একটানা দৌড়াতে হবে না। বরং, ম্যাচের নির্দিষ্ট সময়ে তার উপস্থিতি দিয়েই দল জয় এনে নিতে পারে।

আর্জেন্টিনা দলের কৌশলগত রূপান্তর: স্কালোনির পরিকল্পনা এবং মেসির নতুন ভূমিকা

২০১৮ সালের বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার দায়িত্ব নেওয়া স্কালোনি ছিলেন একটি অপ্রত্যাশিত নাম। কিন্তু তার অধীনে আর্জেন্টিনা যা অর্জন করেছে—তা বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। কোপা আমেরিকা ২০২১ এবং কাতার বিশ্বকাপ ২০২২—এই দুটি শিরোপাই এসেছে মেসিকে কেন্দ্র করে একটি টিম সিস্টেম তৈরি করার মাধ্যমে।

স্কালোনির কৌশল:

  • পজিশন-ভিত্তিক খেলা, যেখানে বল দখলে রেখে প্রতিপক্ষকে ক্লান্ত করে মেসির জন্য জায়গা তৈরি করা হয়।
  • আলভারেজকে দিয়ে “press and support” রোল—যিনি মেসির জন্য দৌড়ান, ডিফেন্ড করেন এবং আক্রমণেও যান।
  • মিডফিল্ডে ডি পল, এনজো ও ম্যাক অ্যালিস্টার মিলে তৈরি করেন “মেসির সাপোর্ট নেটওয়ার্ক”।

এই কৌশল এতটাই কার্যকর যে, পুরো দল যেন মেসির শক্তি ও সীমাবদ্ধতা অনুযায়ী গড়ে উঠেছে।

মেসি ছাড়াও আর্জেন্টিনার প্রস্তুতি: ভবিষ্যতের দিকে এক দৃষ্টি

২০২৪ কোপা আমেরিকার ফাইনালে ইনজুরির কারণে মেসিকে তুলে নেওয়া হয়। এবং তার অনুপস্থিতিতে আর্জেন্টিনা আরও গতিশীল হয়ে ওঠে ও ম্যাচ জিতে নেয়। এরপর স্কালোনি দুটি কৌশলগত পরীক্ষা চালান:

  1. আলভারেজ ও লাউতারো মার্টিনেজ একসাথে খেলেন—আলভারেজ “মেসির পজিশনে”
  2. আলভারেজ ফরোয়ার্ডে, আলমাদা লেফট থেকে কাট ইন করে মেসির প্লেমেকার রোল নেন

এই পরিকল্পনা সফল হয়েছে। চিলি ও ব্রাজিলের বিপক্ষে জয় এসেছে মেসিহীন দল নিয়ে। স্কালোনি এখন জানেন—মেসি ছাড়াও আর্জেন্টিনা জয়ী হতে পারে।

২০২৬ বিশ্বকাপ: শেষ নাকি শুরু?

মেসি এখনো ঘোষণা দেননি তিনি ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলবেন কি না। তবে তার শারীরিক প্রস্তুতি, ম্যাচ পারফরম্যান্স এবং দলের পরিপক্বতা দেখে অনুমান করা যায়—তিনি হয়তো শেষবারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নেবেন।

এই বিশ্বকাপ হতে পারে তার “Last Dance”—যেখানে তিনি তার ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক গোল কিংবা ফ্রি-কিকটি নিয়ে আবারও বিশ্বকে মুগ্ধ করবেন।

JitaBet ,  JitaWin , এবং  JitaGo- তে আপনার বাজি ধরুন,   তারা সত্যিই ভালো সম্ভাবনা অফার করে, খেলুন এবং বড় জয়লাভ করুন!

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

প্রশ্ন ১: মেসি কি নিশ্চিতভাবে ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলবেন?
উত্তর: এখনো নিশ্চিত নয়, তবে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে মনে হচ্ছে তিনি খেলতে পারেন।

প্রশ্ন ২: তার খেলার ধরনে কী পরিবর্তন এসেছে?
উত্তর: আগের মতো গতি নির্ভর খেলা নেই, বরং এখন তিনি পজিশন, পাসিং ও খেলার ছন্দ কন্ট্রোল করেন।

প্রশ্ন ৩: স্কালোনি কি নতুন কৌশলে সফল?
উত্তর: হ্যাঁ, মেসি ছাড়াও দল জয় পাচ্ছে, যা ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক।

প্রশ্ন ৪: ইন্টার মায়ামিতে মেসি কেমন খেলছেন?
উত্তর: ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপে দুর্দান্ত গোল সহ মাঠে নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রশ্ন ৫: মেসির অনুপস্থিতিতে কে তার জায়গা নিতে পারেন?
উত্তর: থিয়াগো আলমাদা, জুলিয়ান আলভারেজ এবং লাউতারো মার্টিনেজ—তাদের ওপর আস্থা রাখছেন স্কালোনি।

উপসংহার

লিওনেল মেসির ক্যারিয়ার যেখানে শেষের পথে, সেখানেই ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে আরও একবার আলো জ্বালাতে পারেন তিনি। ২০২৬ বিশ্বকাপ যদি হয় তার শেষ আন্তর্জাতিক মঞ্চ, তবে সেটি হবে ইতিহাসের এক আবেগঘন অধ্যায়। কিন্তু তার চেয়েও বড় বিষয় হলো—মেসির উপস্থিতি মানে এখনো গোল, প্রেরণা, এবং ফুটবলকে ভালোবাসার এক মূর্ত প্রতীক।

For More Update Follow JitaSports English News and JitaSports BD News


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *