SAFF মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ , যাকে দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন মহিলা কাপও বলা হয়, এটি নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দলের জন্য একটি প্রতিযোগিতা। সাত সদস্যের সবাই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের যোগ্য।দশরথ রঙ্গশালায় দর্শকদের স্তব্ধ করে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের ঐতিহাসিক সাফল্য! সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বিতীয়বার শিরোপা ধরে রাখার উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইয়ে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে গড়ল আরেকটি বিজয়গাঁথা।
দর্শকের কোলাহলে নীরবতার সূচনা SAFF
দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়াম, যেখানে নেপালের সমর্থকদের ভিড়। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা অনুযায়ী দর্শক সংখ্যা ১৫,৩৭৩ জন। বিশাল এই সমর্থক দলের মাঝে, আঙুলের ইশারায় নীরবতা এনে দেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। মারিয়া মান্দা ও মনিকা চাকমার প্রত্যয়, এবং ঋতুপর্ণা চাকমার অনবদ্য গোল মুহূর্তেই দর্শকদের স্তব্ধ করে দেয়। এই গোলের মাধ্যমে তৈরি হলো আরেকটি সাফল্যগাঁথা, যেখানে বাংলাদেশের মেয়েরা নেপালকে হারিয়ে উইমেনস সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দিল বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দল ।
আক্রমণ আর প্রতিআক্রমণের খেলা
ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক এবং প্রতিপক্ষের প্রেসিং। প্রথম মিনিটেই বাংলাদেশ গোলের সুযোগ পেয়ে যায়। নেপালের ডিফেন্ডারের ভুলে তহুরা সামনে থাকা বলকে পোস্টে মেরে বসেন। ফিরে আসা বল আবার হেডে নেন, তবে তা নেপালের অধিনায়ক আনজিলার হাতে আটকে যায়।
অন্যদিকে, নেপালও বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে থাকে। তাদের ফরোয়ার্ড সাম্বা এক পর্যায়ে বাংলাদেশের গোলকিপার রূপনা চাকমাকে বোকা বানিয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন, বল লাগে বারে। এই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের উত্তেজনায় মুখর ছিল পুরো প্রথমার্ধ।
মনিকার প্রথম গোলের উল্লাস
দ্বিতীয়ার্ধে ৫১ মিনিটে আসে প্রথম গোল। সাবিনার থ্রু বল একটু এদিক-ওদিক হলেও ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে বল চলে যায় মনিকার কাছে। বক্সে ঢুকে মনিকা শেষ মুহূর্তে একটি স্পর্শ দিয়ে গোল করেন। বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ১-০ ব্যবধানে। তবে এ আনন্দ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। পাঁচ মিনিট পরই নেপালের আমিশা কারকি মাঝমাঠ থেকে একটি দুর্দান্ত থ্রু বল পেয়ে ফিনিশ করেন এবং নেপাল সমতা ফেরায় বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দল।
ঋতুপর্ণার রূপকথার মতো গোল
৮০ মিনিটে থ্রো ইন থেকে বল পেয়ে যান ঋতুপর্ণা চাকমা। পুরো ম্যাচেই তাকে ঘিরে রেখেছিল নেপালের কয়েকজন ডিফেন্ডার, কিন্তু এবার কেউ ছিল না। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে একদম বাঁ দিক থেকে ভেতরে ঢুকে নেন শট, যা আনজিলার হাত ছুঁয়ে জালে ঢুকে যায়। ম্যাচের ফলাফল নিশ্চিত করে দেয় এই গোল, যা শেষপর্যন্ত নেপালকে হারিয়ে বাংলাদেশকে বিজয়ী করে তোলে বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দল।
সাফের শিরোপা ধরে রাখার সাফল্যে বাংলাদেশের উদযাপন
ম্যাচ শেষ হলে দশরথ রঙ্গশালার দর্শক স্তব্ধ। দ্বিতীয়বারের মতো সাফের শিরোপা জয় করে বাংলাদেশ লিখল রূপকথার গল্প। বিপক্ষ দলের ঘরের মাঠের সুবিধা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এই অর্জনকে সম্ভব করেছে তাদের শক্তিশালী দলীয় প্রচেষ্টার মাধ্যমে। নেপালের টানা দ্বিতীয়বার ফাইনাল হারের হতাশায় পুড়তে হলো, আর বাংলাদেশের মেয়েরা নতুন করে লিখল সাফল্যের কাব্য বাংলাদেশ নারী।
বাংলাদেশের মেয়েদের সাফ জয়ের গল্প
দুই বছর আগে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবার জয়ী হয়ে দেশের মাটিতে পা রেখেছিল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। সেই মুহূর্ত ছিল গর্বের ও আবেগঘন। বিমানবন্দর থেকে মতিঝিলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবন পর্যন্ত তাদের সংবর্ধনার জন্য ছাদখোলা বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এই পথজুড়ে হাজারো ফুটবলপ্রেমী সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে সাবিনা, সানজিদা, মাসুরাদের অভিনন্দিত করেছিলেন। তুমুল উদ্দীপনা ও উৎসাহ নিয়ে তারা রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে দেশের সাফল্যকে উদ্যাপন করেছিলেন বাংলাদেশ নারী।
এবার টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ শিরোপা ধরে রাখায় বাফুফের সদ্য নির্বাচিত কমিটি আবারও মেয়েদের সংবর্ধনার জন্য এমনই আয়োজন করতে যাচ্ছে। বাফুফে মিডিয়া ম্যানেজার সাদমান সাকিব প্রথম আলোকে জানান, তাদের এই শহর প্রদক্ষিণে বিআরটিসির একটি ছাদখোলা বাস প্রস্তুত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, একটি ছাদখোলা বাসে চ্যাম্পিয়ন ফুটবলারদের শহরের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে, যাতে সবাই তাদের সাফল্য উদ্যাপন করতে পারে বাংলাদেশ নারী।
শুক্রবার দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে কাঠমান্ডু থেকে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে এই বিজয়ী দল। তারপরই শুরু হবে সংবর্ধনার আয়োজন। জানা গেছে, বাফুফে ভবন পর্যন্ত বিভিন্ন রাস্তায় ফুটবলপ্রেমীরা তাদেরকে স্বাগত জানাতে ভিড় করবেন। পথে পথে থাকবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানের আয়োজন ।
দশরথ রঙ্গশালায় দ্বিতীয়বারের ইতিহাস
সাফ জয়ী নারী ফুটবল দলকে অভিনন্দন জানাতে এগিয়ে এসেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ক্রীড়াঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস ও যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া দলটিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ফোনে তারা জানিয়েছেন, ‘দেশের সম্মান বৃদ্ধিতে নারী ফুটবল দলের এই সাফল্য অনন্য। তারা আমাদের জন্য গর্বের উৎস হয়ে উঠেছে। দেশে ফিরে এলে মেয়েদের জন্য একটি বিশেষ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হবে।’
বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দল
বাফুফের সদ্য নির্বাচিত সভাপতি তাবিথ আউয়াল তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে একটি দীর্ঘ পোস্ট করে নারী ফুটবল দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তার পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ‘অভিনন্দন! বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হলো। এই অর্জন শুধুমাত্র ক্রীড়াক্ষেত্রে নয়, বরং পুরো জাতির জন্য একটি গর্বের বিষয়। আমরা সবাই আজ আমাদের নারী ফুটবলারদের নিয়ে গর্বিত ও আনন্দিত। এই জয় আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে উদ্বুদ্ধ করবে এবং প্রতিকূলতা অতিক্রমে আমাদের অনুপ্রাণিত করবে।’
এই সংবর্ধনা আয়োজনে আরও উপস্থিত থাকবেন দেশের বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা। নারী ফুটবল দলের এই অর্জন শুধু দেশের জন্যই গর্ব নয়, বরং এশিয়ার ফুটবল পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের নামকে আরও সুদৃঢ় করেছে। দেশের মানুষ এখন অপেক্ষায় আছে আরেকটি গর্বের মুহূর্ত উদ্যাপনের, যেখানে ছাদখোলা বাসে করে চ্যাম্পিয়নরা নগর প্রদক্ষিণ করবে, আর মানুষ তাদের দেখতে ও অভিনন্দন জানাতে রাস্তায় দাঁড়াবে।
মোটকথা, এই সংবর্ধনা শুধু নারী ফুটবলারদের জন্যই নয়, বরং পুরো দেশের জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত হয়ে উঠতে যাচ্ছে।
JITABET এবং JITAWIN- এ আপনার বাজি রাখুন , তারা সত্যিই ভাল প্রতিকূলতা অফার করে, খেলুন এবং বড় জিতুন!
FOR MORE UPDATE FLOW jitabet English News and jitabet Bangla News